ওয়েবসাইট কাকে বলে? ওয়েবসাইট কেন প্রয়োজন?

ওয়েবসাইট কাকে বলে? ওয়েবসাইট কেন প্রয়োজন?

10GB+COM-riyahost

আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের একটি অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে থাকা কোটি কোটি ওয়েবসাইট একে অপরের সাথে সমন্বয় করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তৈরি করেছে। যা মানুষের জন্য তথ্যভাণ্ডার তৈরির পাশাপাশি নলেজ শেয়ারের দ্বার উন্মোচন করেছে। আমাদের আজকের লেখায় আমরা ওয়েবসাইট কি, কীভাবে কাজ করে এবং তৈরি করার উপায় সম্পর্কে ধারণা লাভ করবো।

ওয়েবসাইট কাকে বলে?

ওয়েবসাইট হলো টেক্সট, অডিও, ভিডিও এবং গ্রাফিক্স এর সমন্বয়ে তৈরি ওয়েব পেজ। ওয়েবসাইট এক বা একের অধিক ওয়েব পেজ নিয়ে গঠিত হয়। মূলত আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করা বলতে ওয়েবসাইট ভিজিট করাকে বুঝি।

আমরা যখন কোনো ওয়েব ব্রাউজার সফটওয়্যারে URL প্রবেশ করি তখন আমাদের সামনে যে ভিজুয়াল দৃশ্য প্রদর্শিত হয় তা মূলত একটি ওয়েবসাইটের মূল পেজ। এই মূল পেজের সাথে আরও অন্যান্য পেজ যোগ করে ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়।

সহজভাবে বলতে গেলে, আমরা সাধারণত কোন খেলা যেমন ক্রিকেট দেখতে স্টেডিয়ামে যাই। সেখানে খেলা দেখার জায়গা আলাদা থাকে এবং প্লেয়ারদের খেলার জায়গা আলাদা থাকে। এখানে যে মাঠটুকুতে প্লেয়াররা খেলাধুলা করে সেটা হলো ওয়েবসাইট এবং বসার জায়গায় বসে যারা খেলা দেখে তারা ওয়েবসাইটের ভিজিটর।

যাইহোক, ওয়েবসাইট একটি HTML ডকুমেন্ট যা ইন্টারনেটে একটি ওয়েব সার্ভারে স্টোর করা থাকে। সেখানে HTML ডকুমেন্ট এর সাথে লেখা, ভিডিও বা ছবিসহ ওয়েবসাইট এর সব ধরনের উপাদান থাকে। এই ডকুমেন্ট HTTP/HTTPS প্রোটোকলের মাধ্যমে ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ভিজিট করা যায়।

মোটকথা, ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক প্রসারের জন্য বিশ্বব্যাপি সবার কাছে পণ্য বা সার্ভিসের বর্ণনা দিয়ে একটি ভিজুয়াল অনলাইন পেজ বা পাতা তৈরি করাকে ওয়েবসাইট বলে।

ওয়েবসাইটের কাজ কি?

ওয়েবসাইটের কাজ হলো বহুমুখী। অর্থাৎ এটি একাধারে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। আমরা আগেই জেনেছি ওয়েবসাইট তথ্য প্রদর্শন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। ইন্টারনেটে আমরা যখন কোনো তথ্য মানুষকে দেখাতে চাই তখন আমাদের ওয়েবসাইটের প্রয়োজন পরে।

ওয়েবসাইট প্রধানত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দ্বারা তৈরি করা হয়। প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে একটি ওয়েব পেজে বিভিন্ন রকম ডাটা যেমন লেখা, ভিডিও, ছবি ইত্যাদি স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন ওয়েব টেকনোলজি দিয়ে এই ওয়েব পেজগুলোকে সুরক্ষিত করা হয়। একটি ওয়েবসাইটের প্রধান কাজ থাকে তার ভিজিটরের কাছে তথ্যগুলোকে দৃষ্টিনন্দন ও সুরক্ষিতভাবে প্রদর্শন করা। নিচে ওয়েবসাইটের কি কি কাজ তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

তথ্য প্রদর্শনঃ প্রতিটি ওয়েবসাইট একেকটি  তথ্য ভাণ্ডার। সাধারণত কোন ধরনের তথ্য প্রদর্শিত হবে, তার উপর নির্ভর করে ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ ব্যক্তিগত সাইটকে ব্লগ এবং কেনাকাটা করার সাইটকে ইকমার্স ওয়েবসাইট বলে।

অর্থাৎ কোন ধরনের তথ্য প্রদর্শন করা হবে তার উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইটের ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়। তারপর সে অনুযায়ী ডিজাইন করা হয় যাতে অল্প জায়গায় অনেকগুলো ডাটা শো করানো যায়।

কাস্টমার তৈরিঃ ধরুন আপনার একটি চায়ের ফ্লাস্ক তৈরি করার ব্যবসা আছে। আপনি লোকাল মার্কেটে সর্বোচ্চ ২০০ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন এবং প্রতিদিন ১০ টা করে সেল দেন যা উৎপাদনের তুলনায় খুব অল্প পরিমাণে মুনাফা তৈরি করে। আপনি যদি অনলাইনে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে এই ফ্লাস্ক বিক্রি করা শুরু করেন তবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছাবে।

এতে আপনার বিজনেসের জন্য খুব সহজেই অনেক বড় কাস্টমার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবেন। তাছাড়া লোকাল মার্কেটে আপনার ব্র্যান্ডের মার্কেটিং এর পেছনে যে পরিমাণ খরচ হয় টা ওয়েবসাইটের পেছনে প্রয়োগ করে অনেক ভালো ফলাফল পাবেন।

তথ্য পুনর্বিন্যাসঃ আমরা যখন একটি বই পড়ি তখন সেখানে অনেকগুলো পেজ পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে। এখন কোনো প্রয়োজনে ৫০০ পাতার একটি বই থেকে যদি কোন তথ্য বের করতে হয় যা কোন পেজে আছে তা জানা না থাকে, তাহলে অনেক পরিশ্রম করে খুঁজে বের করতে হবে।

কিন্তু সেই বইয়ের ৫০০ পেজ যদি সুন্দর করে সাজানো থাকতো তাহলে এত পরিশ্রম করতে হতো না। একটি ওয়েবসাইট ঠিক এই কাজ টাই করে। অর্থাৎ আপনার প্রয়োজনীয় সকল ডাটা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা যায়। কোনো বিষয় ভিজিটরকে বুঝানোর জন্য ভিডিও, ইমেজ বা গ্রাফিক্সের মাধ্যমে সহজবোধ্য করে গড়ে তোলা যায়।

ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করে?

ওয়েবসাইট তৈরি করা একটি পর্যায়ক্রমিক কাজ। ওয়েব পেজ তৈরি ও মেইন্টেইন করার জন্য টেকনিক্যাল জ্ঞানের প্রয়োজন পরে। নিচে একটি ওয়েবসাইট কীভাবে তৈরি করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হলো।

ডোমেইন হোস্টিংঃ আমরা জানি প্রতিটি ওয়েবপেজ অনলাইনে সার্ভারে জমা থাকে। সার্ভারে জমা করা এবং তা থেকে ভিজিটরের সামনে ওয়েব পেজ প্রদর্শিত করার জন্য প্রয়োজন পরে ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিসের। এখানে ওয়েবসাইটের নাম এবং অ্যাড্রেস (URL) কে ডোমেইন বলা হয়। এই ডোমেইন দ্বারা ইন্টারনেটে থাকা কোটি কোটি ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়।

হোস্টিং হলো ওয়েবসাইটের সকল ফাইল স্টোর করে রাখার জায়গা, যাকে সার্ভার বলে। ডোমেইন ক্রয় করার পর তা হোস্টিং এর সাথে কানেক্ট করা হয়। এতে যখন কোন ইউজার ওয়েব ব্রাউজারে ডোমেইন নেম প্রবেশ করে তখন তা হোস্টিং এর কাছে HTTP/HTTPs রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে কাঙ্ক্ষিত ওয়েবপেজ প্রদর্শিত করে।

প্লাটফর্ম নির্বাচনঃ ওয়েবসাইট সাধারণত দুই ধরনের, যেমন স্ট্যাটিক ও ডায়নামিক হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে আবার কাস্টম এবং সিএমএস নির্ভর ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। কাস্টম সিস্টেমে আপনি যে কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে কোড লিখে প্রতিটি ওয়েব পেজ তৈরি করে তা সার্ভারে আপলোড করে ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন।

অন্যদিকে সিএমএস যেমন ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করে সহজেই প্রি-মেড থিম বা টেম্পলেট ইন্সটল করে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। তো ডোমেইন হোস্টিং নেওয়ার পর কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন তা নির্ধারণ করে নিতে হবে।

কন্ট্রোল প্যানেলঃ কন্ট্রোল প্যানেল হলো আপনার ওয়েবসাইটের হোস্টিং ড্যাশবোর্ড নিয়ন্ত্রণ করা। একটি ওয়েবসাইটের সব ধরনের টেকনিক্যাল ডাটা এবং সেটিংস এখানে থাকে। কন্ট্রোল প্যানেল থেকে আপনি ওয়েবসাইটের সকল কনটেন্ট এবং থিম ফাইল আপলোড, ডাউনলোড এবং ডিলিট করতে পারবেন। তাছাড়া সিকিউরিটি সেটিংস সহ অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় সেটিং পাবেন।

ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টঃ ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার ডিজাইনের উপর নির্ভর করে ওয়েবসাইটটি ভিজিটরের সামনে কেমন দেখাবে। ওয়েবসাইট তৈরি করার উদ্দেশ্য এবং সফলতার মাঝখানে ডিজাইন অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করে।

অন্যদিকে, ওয়েব পেজ ডেভেলপমেন্টের উপর পুরো ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স নির্ভর করে। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইট কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া ২৪/৭ চলার জন্য এবং নিত্যনতুন ফিচার যোগ করার জন্য ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজনীয়। মোটকথা ওয়েবসাইট সম্পূর্ণটাই ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টের উপর নির্ভরশীল।

ওয়েবসাইট পাবলিশঃ যখন উপরে বর্ণিত সকল কাজ করা শেষ হয়ে যাবে তখন আপনার ওয়েবসাইট ইন্টারনেটে পাবলিশ করার জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে। ওয়েবসাইটের সব ধরনের টেস্ট এবং বাগ ফিক্সিং করা হয়ে গেলে কনটেন্ট অ্যাড করে তা ইন্টারনেটে পাবলিশ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমেই সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইট ইনডেক্স করাতে হবে যাতে মানুষ গুগল বা বিং এ সার্চ করেই আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারে।

ওয়েবসাইট কেন প্রয়োজন?

নিচে ওয়েবসাইট কেন প্রয়োজন, সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো।

  • নিজের মতামত অনলাইনে সবার কাছে শেয়ার করার জন্য ওয়েবসাইট প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে ব্লগ ওয়েবসাইট সব থেকে বেশি উপযোগী। তাছাড়া যেহেতু ওয়েবসাইটের সব ধরনের অ্যাক্সেস আপনার কাছে থাকবে সেহেতু আপনি কোন বাঁধা ছাড়াই মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন।
  • ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য ওয়েবসাইট অনেক ভালো এবং কার্যকরী মাধ্যম। আমরা যেখানে হাজার হাজার টাকা খরচ করে মার্কেটিং করে বিজনেস প্রসার ঘটাই সেখানে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনা মূল্যে লাখ লাখ মানুষের কাছে নিজের ব্র্যান্ড সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়।
  • ওয়েবসাইটে মনিটাইজেশন চালু করে অনলাইন থেকে আয় করা যায়। গুগল অ্যাডসেন্স বা ইজয়িক অ্যাড নেটওয়ার্ক থেকে পারমিশন নিয়ে ওয়েবসাইটে তাদের অ্যাড দেখিয়ে প্রতি মাসে অনেক বড় আমাউন্ট আয় করা যায়।
  • অ্যাড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা ছাড়াও অ্যাফিলিয়েট, প্রমোশন, মার্কেটিং ইত্যাদি পন্থা ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইনকাম করা সম্ভব।

উপরিউক্ত আলোচনায় ওয়েবসাইট কি, কীভাবে কাজ করে এবং এটি কেন মানব জীবনে প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে। আশা করি লেখাটি পড়ে আপনার ওয়েবসাইট নিয়ে সকল ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

10GB+COM-riyahost

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *